
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের মেরাতলী গ্রামে মাছ চুরি করাকে কেন্দ্র করে হানিফ মিয়া নামে আনুমানিক ৩৫ বছরের এক ব্যক্তিকে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে একই গ্রামের আলাউদ্দিন মিয়া, আলী হোসেন ও শাহজাহান নামের ৩ ব্যক্তি।
নদীর পাড়ের মেরাতুলি গ্রামটিতে বড় দুটো ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করার পাশাপাশি কয়েক বছর যাবৎ পৃথকভাবে পুকুর,ডুবা,নালায় মাছের চাষ করে আসছে নাছির মিয়ার ছেলে হানিফ। চলতি সময়ে মাছ চোরদের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় চুরি ঠেকাতে রাতে পাহারা দেয় সে।
এলাকাবাসী জানায়, একইগ্রামের নুরু মিয়ার বাড়ির পাশের ডোবাটি বাৎসরিক পত্তণ নিয়ে মাছ চাষ করে হানিফ। ডোবা থেকে প্রায়ই নাকি মাছ চুরি হয়। আর সেকারণে চুরি ঠেকাতে প্রতিদিন পাহারা দিতে হয়। গতসপ্তাহে রাত আনুমানিক একটার দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে হানিফ ডোবার পাড়ে গিয়ে গিয়ে দেখতে পায়, নুরু মিয়ার ছেলে শাহজাহান, মৃত জব্বর মিয়ার ছেলে আলাউদ্দিন মিয়া ও আলী হোসেন ডোবা থেকে মাছ চুরি করে বড় বড় ডেগে ভরছে। মাছ ধরার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে হানিফের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ওই ৩ জন। এ নিয়ে তর্কাতর্কি ও একপর্যায়ে তারা থাকা কাঠ, শাবল ও লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে হানিফকে। এতে মাথায় প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হন তিনি।
আহতবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে অবস্থার অবনতি দেখে দায়িত্বরত চিকিৎসকেরা তাকে ঢাকায় রেফার করেন।
স্বামীর এই অবস্থায় সন্তানদের নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন হানিফের স্ত্রী। অপরদিকে হানিফের মা ও বাবা ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখার পর থেকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসী জানায়,হানিফের এলাকায় তেমন কোন শত্রু ছিলোনা। মাছ চোরদের নির্মম নির্যাতনের ঘটনার বিচার চান তারা।
এই ঘটনায় হানিফের বাবা নাছির মিয়া বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামী করে নবীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নাছির মিয়া জানান,আলী হোসেন নামে এক আসামী মামলার পর বিদেশে চলে গেছে। বাকিরাও বাড়িতে থাকেনা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে,হানিফকে চিকিৎসার উদ্যেশে ঢাকায় পাঠানোর পর এলাকায় তার মৃতুর গুজব রটে!
সেকারণে ক্ষিপ্ত হয়ে হানিফের পক্ষের কয়েকজন লোক লাঠিসোটা নিয়ে প্রতিপক্ষ নুরু মিয়ার বাড়িতে যায়। পরে মৃত্যুর খবরটা গুজব জানতে পেরে তারা চলেও আসে। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে অভিজ্ঞ নুরু মিয়া লুটপাট ও ভাংচুরের মামলা ঠুকে দেন হানিফের পক্ষের লোকজনের নামে।
হানিফের বোন জানান,তাদের পরিবারের লোকজনকে ফাঁসাতে তারা উল্টো ২ লাখ টাকার চাঁদা দাবি ও ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লুটপাট ও ভাংচুরের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি আরো জানান, মাছ চুরি ও মারধরের ঘটনাটি আড়াল করতে তারা কৌশলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভুয়া সংবাদ প্রচার করছে।
৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি, হামলা, লুটপাটের বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে নুরু মিয়ার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। নুরু মিয়ার পরিবারের কয়েকজন মহিলা সদস্য সাংবাদিকদের উপস্থিতি দেখে ভড়কে যান। তারা জানান, এই মুহূর্তে বাড়িতে কোন পুরুষ লোক নেই। অন্য একটি সুত্র জানায়, মাছ চুরি ও মারধরের ঘটনার পর আসামীরা এলাকা ছাড়া।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নবীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির জানান, মাছ চুরিকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনার অভিযোগ পেয়েছি। আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।