ঢাকা , শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
নবীনগর সার্বজনীন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মুখপাত্র হলেন জামাল হোসেন পান্না গোপালপুর দক্ষিণ কবরস্থানের উন্নয়ন কাজের শুভ উদ্বোধন ঈদে বাড়ি ফেরার পথে মেঘনায় প্রাণ গেল বউ-শাশুড়ির নবীনগরে ঈদের জামাত শেষে মুসল্লীদের সাথে ইউএনও রাজীব চৌধুরীর শুভেচ্ছা বিনিময় তরুণ সমাজকে দক্ষ ও আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করতে সার্বজনীন গ্রুপের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নবীনগরে সার্বজনীন গ্রুপের ফ্রি উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণের পঞ্চম ক্লাস সম্পন্ন নবীনগরে কিন্ডারগার্টেন বৃত্তি পরীক্ষা-২০২৪: কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত নবীনগরে বাঁশই ভরসা’-সাঁকো ভেঙ্গে পড়ায় থমকে আছে সাত গ্রামের জীবনযাত্রা ইউনিলিংক এডুকেশনের শিক্ষার্থীদের জাপান যাত্রা: ভাষা শিক্ষার সফল ফলাফল নবীনগরে সিদীপ সমৃদ্ধি কর্মসূচীর আওতায় বার্ষিক ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা সম্পন্ন
নোটিশ :

✍️সংবাদদাতা আবশ্যক👉'দেশ বিদেশ নিউজ ২৪.কম' এর জন্য জরুরী ভিত্তিতে দেশের প্রত্যেক জেলা-উপজেলায় প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে।আগ্রহীরা মেইলে যোগাযোগ করুন।

জুয়ায় হেরে ২১ দিনের শিশুকে রেখে লাইভে নারীর আত্মহত্যা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় ১১:৫৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪
  • ৩৫২ বার পড়া হয়েছে

অনলাইনে জুয়ায় আসক্ত হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়া ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলি এলাকার আফরোজা ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক আফরোজা মীম বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। মাত্র ২১ দিনের নবজাতক সন্তান রেখে জুয়ায় নিঃস্ব হয়ে জীবন দিলেন তিনি।

এর আগে, ঋণগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) ভোরে পালিয়ে যান তিনি। এর মাত্র ১৫ দিন আগে মীম একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।

মধুখালি উপজেলার আড়পারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বদিউজ্জামাল বাবু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে মীম চট্টগ্রামের কোনো এক বন্ধুর বাসায় বিষপানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রোববার (২৭ অক্টোবর) রাতে তার মৃত্যু হয়। সোমবার (২৮ অক্টোবর) বাদ মাগরিব মীমের নিজ বাড়ি মধুখালির আড়পাড়ায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

জানা গেছে, মৃত্যুর আগে মীম তার স্বামী মোহাম্মদ সাব্বিরের ফেসবুক আইডিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেড় ঘণ্টার একটি লাইভ করেন। সেখানে তিনি আত্মহত্যা করবেন সে বিষয়টিও বলেন। তার অনেক টাকা দেনা হয়েছেন সে বিষয়টিও লাইভে উল্লেখ করেন তিনি।

ফেসবুক লাইভে তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে তার নানা চড়াই উতরাই পেরোনোর কথা বলেন। এ সময় তার কাছে কেউ টাকা পাবে না বলে জানিয়ে তিনি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের কারণেই এই পরিণতি বলে জানান।
একসময় মীম তার এক হাতে বিষের বোতল নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ব্যবসাটা বড় হয়ে গেছে দেখে ওদের নজরে পড়ে গেছে। আজ ওরা আমাকে শেষ করে দিয়েছে। যারা আমাকে আমার ভালোবাসার মানুষ থেকে আজ দুরে সরিয়ে দিল। তোরা ওদের কাউকে ছাড়িস না। বেশ কয়েকজনকে তার এই নির্মম পরিণতির জন্য দায়ী করে লাইভ ভিডিওতেই বিষপান করেন তিনি।

শহরের ঝিলটুলী মহল্লার ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন হাসপাতালের সামনে অবস্থিত আফসানা ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক আফসানা মীম। ওই হোস্টেলর ছাত্রী ও বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। এ ঘটনায় ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রায় চার বছর আগে ঝিলটুলীর সুফিয়া বেগমের মালিকানাধীন ১১ তলাবিশিষ্ট রহমত টাওয়ারের ছয়টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আফসানা ছাত্রী হোস্টেল নামে ওই মেসটি চালু করেন মধুখালি উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মামুন মোল্লার মেয়ে আফসানা মীম। সেই ছয়টি ফ্লাটের বিভিন্ন কক্ষে প্রায় ১২০ জন ছাত্রী সদস্য ছিল। একই বিল্ডিংয়ের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্বামী ইমামুজ্জামান মিয়া ওরফে সাব্বিরকে নিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন মীম। পালিয়ে যাওয়ার ১৫ দিন আগে শহরের একটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।

গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) ভোরে হঠাৎ একটি হলুদ পিকআপভ্যান ও দুটি ভ্যানে করে তার পরিবারের সব মালামাল নিয়ে উধাও হয়ে যান মীম।

তার আগে, মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে মীম ওই হোস্টেলের সব ছাত্রীদের কাছে ১ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত টাকা সংগ্রহ করেন। তারপর ভোরের দিকে লাপাত্তা হয়ে যায় বলে জানান হোস্টেলের ছাত্রীরা।

একাধিক ছাত্রী বলেন, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে মীমের প্রায় ৫০ লাখ টাকা দেনা হয়ে যায়। তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাদের নিকট থেকেও টাকা ধার নিয়েছেন।

মীমের ফুপু সাহানা বেগম বলেন, আমার মেয়ে আশার কাছ থেকেও মীম ৩ লাখ টাকা লোন নেয়। তিন দিন আগে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলিতে তার বাসায় টাকা আনতে গিয়ে শুনি মীম তার পরিবার নিয়ে পালিয়েছে। মীম সেখানে একটি মহিলা মেস পরিচালনা করতো। সেখানেও নাকি সে প্রায় ৫০ লাখ টাকা দেনা রেখে উধাও হয়।

ছাত্রী হোস্টেলের বিল্ডিং মালিক সুফিয়া বেগমের ছেলে মো. রফিক বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) তার বাড়ির ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল। তার আগে বুধবার (২৩ অক্টোবর) খুব ভোরে কাউকে কিছু না বলে পিকআপভ্যানে মালামাল নিয়ে উধাও হন আফসানা মীম। দুপুরে একে একে পাওনাদারদের ফোনে এসব জানতে পারি। তার নেওয়া ছয়টি ফ্লাটের প্রতিটির ভাড়া ২০ হাজার টাকা করে। ২ মাসের ভাড়া বকেয়া আছে তার। বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া রেখেছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা।

ট্যাগস

নবীনগর সার্বজনীন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের মুখপাত্র হলেন জামাল হোসেন পান্না

জুয়ায় হেরে ২১ দিনের শিশুকে রেখে লাইভে নারীর আত্মহত্যা

আপডেট সময় ১১:৫৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

অনলাইনে জুয়ায় আসক্ত হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়া ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলি এলাকার আফরোজা ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক আফরোজা মীম বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। মাত্র ২১ দিনের নবজাতক সন্তান রেখে জুয়ায় নিঃস্ব হয়ে জীবন দিলেন তিনি।

এর আগে, ঋণগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) ভোরে পালিয়ে যান তিনি। এর মাত্র ১৫ দিন আগে মীম একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।

মধুখালি উপজেলার আড়পারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বদিউজ্জামাল বাবু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে মীম চট্টগ্রামের কোনো এক বন্ধুর বাসায় বিষপানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। রোববার (২৭ অক্টোবর) রাতে তার মৃত্যু হয়। সোমবার (২৮ অক্টোবর) বাদ মাগরিব মীমের নিজ বাড়ি মধুখালির আড়পাড়ায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

জানা গেছে, মৃত্যুর আগে মীম তার স্বামী মোহাম্মদ সাব্বিরের ফেসবুক আইডিতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দেড় ঘণ্টার একটি লাইভ করেন। সেখানে তিনি আত্মহত্যা করবেন সে বিষয়টিও বলেন। তার অনেক টাকা দেনা হয়েছেন সে বিষয়টিও লাইভে উল্লেখ করেন তিনি।

ফেসবুক লাইভে তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে তার নানা চড়াই উতরাই পেরোনোর কথা বলেন। এ সময় তার কাছে কেউ টাকা পাবে না বলে জানিয়ে তিনি কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের কারণেই এই পরিণতি বলে জানান।
একসময় মীম তার এক হাতে বিষের বোতল নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ব্যবসাটা বড় হয়ে গেছে দেখে ওদের নজরে পড়ে গেছে। আজ ওরা আমাকে শেষ করে দিয়েছে। যারা আমাকে আমার ভালোবাসার মানুষ থেকে আজ দুরে সরিয়ে দিল। তোরা ওদের কাউকে ছাড়িস না। বেশ কয়েকজনকে তার এই নির্মম পরিণতির জন্য দায়ী করে লাইভ ভিডিওতেই বিষপান করেন তিনি।

শহরের ঝিলটুলী মহল্লার ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন হাসপাতালের সামনে অবস্থিত আফসানা ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক আফসানা মীম। ওই হোস্টেলর ছাত্রী ও বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তিনি। এ ঘটনায় ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রায় চার বছর আগে ঝিলটুলীর সুফিয়া বেগমের মালিকানাধীন ১১ তলাবিশিষ্ট রহমত টাওয়ারের ছয়টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আফসানা ছাত্রী হোস্টেল নামে ওই মেসটি চালু করেন মধুখালি উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের মামুন মোল্লার মেয়ে আফসানা মীম। সেই ছয়টি ফ্লাটের বিভিন্ন কক্ষে প্রায় ১২০ জন ছাত্রী সদস্য ছিল। একই বিল্ডিংয়ের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্বামী ইমামুজ্জামান মিয়া ওরফে সাব্বিরকে নিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন মীম। পালিয়ে যাওয়ার ১৫ দিন আগে শহরের একটি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।

গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) ভোরে হঠাৎ একটি হলুদ পিকআপভ্যান ও দুটি ভ্যানে করে তার পরিবারের সব মালামাল নিয়ে উধাও হয়ে যান মীম।

তার আগে, মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে মীম ওই হোস্টেলের সব ছাত্রীদের কাছে ১ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত টাকা সংগ্রহ করেন। তারপর ভোরের দিকে লাপাত্তা হয়ে যায় বলে জানান হোস্টেলের ছাত্রীরা।

একাধিক ছাত্রী বলেন, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে মীমের প্রায় ৫০ লাখ টাকা দেনা হয়ে যায়। তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাদের নিকট থেকেও টাকা ধার নিয়েছেন।

মীমের ফুপু সাহানা বেগম বলেন, আমার মেয়ে আশার কাছ থেকেও মীম ৩ লাখ টাকা লোন নেয়। তিন দিন আগে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলিতে তার বাসায় টাকা আনতে গিয়ে শুনি মীম তার পরিবার নিয়ে পালিয়েছে। মীম সেখানে একটি মহিলা মেস পরিচালনা করতো। সেখানেও নাকি সে প্রায় ৫০ লাখ টাকা দেনা রেখে উধাও হয়।

ছাত্রী হোস্টেলের বিল্ডিং মালিক সুফিয়া বেগমের ছেলে মো. রফিক বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) তার বাড়ির ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল। তার আগে বুধবার (২৩ অক্টোবর) খুব ভোরে কাউকে কিছু না বলে পিকআপভ্যানে মালামাল নিয়ে উধাও হন আফসানা মীম। দুপুরে একে একে পাওনাদারদের ফোনে এসব জানতে পারি। তার নেওয়া ছয়টি ফ্লাটের প্রতিটির ভাড়া ২০ হাজার টাকা করে। ২ মাসের ভাড়া বকেয়া আছে তার। বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া রেখেছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা।