
একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আজ বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলকের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়।
শুনানিতে রিমান্ড আবেদনের যৌক্তিকতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলেন জুনাইদ আহ্মেদের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, তাঁর মক্কেলকে আর কত দিন রিমান্ডে নেওয়া হবে?
তখন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, রিমান্ড তো মাত্র শুরু হয়েছে।
হাজতখানা থেকে এজলাসে
বড় একটি প্রিজন ভ্যান আজ সকাল সকাল নয়টার কিছুক্ষণ পর সিএমএম আদালতের হাজতখানার সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রিজন ভ্যান থেকে নামেন ঢাকা-১৩ আসন সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাজতখানার ভেতরে।
আগেই হাজতখানায় এনে রাখা হয়েছিল জুনাইদ আহ্মেদ পলক ও ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামকে। ২০ মিনিট পর তাঁদের হাজতখানা থেকে বের করে আনা হয়।
এরপর একে একে সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, সাবেক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মশিউর রহমান প্রমুখকে হাজতখানা থেকে আদালতের এজলাসকক্ষে নেওয়া হয়।
আসামিদের আদালতের এজলাসকক্ষের কাঠগড়ায় তোলা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে বিচারক এজলাসে আসেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা ইনসান আলী হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক, সাবেক সংসদ সদস্য সাদিক খান ও সাবেক কাউন্সিলর সলিম উল্লাহকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ।
শুনানির শুরুতে জুনায়েদ আহ্মেদের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন আদালতকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার মক্কেলের ৫৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। রিমান্ড খেটেছেন ৩৪ দিন। রিমান্ড খাটা বাকি আছে ২০ দিন। আবার হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আমার মক্কেলকে আর কত দিন রিমান্ডে নেওয়া হবে?’
ফারজানা ইয়াসমিন আদালতে আরও বলেন, ‘আগেও বহুবার আমার মক্কেলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু নতুন কোনো তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে পারেনি পুলিশ। বরং বারবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কারণে আমার মক্কেল অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আগে রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছিল। যদি আবার জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়, তাহলে তাঁকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেওয়া হোক। রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
জুনাইদ আহ্মেদের আইনজীবীর এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে গণহত্যা হয়েছে। এক হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আরও কয়েক হাজার মানুষকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। বহু মানুষ চোখ হারিয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে মানবতার জীবন যাপন করছেন। আর ফ্যাসিস্ট হাসিনার অন্যতম সহযোগী হলেন জুনাইদ আহ্মেদ পলক। হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বসে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেছেন পলক।’
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আরও বলেন, ‘মাননীয় আদালত, রিমান্ড তো মাত্র শুরু হয়েছে। প্রতিটি হত্যা মামলায় জুনাইদ আহ্মেদ পলকসহ অন্যদের রিমান্ড চাওয়া হবে। কারণ, প্রতিটি হত্যার ষড়যন্ত্রে রয়েছেন জুনাইদ আহ্মেদ পলক। তিনি ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী হলেন এই পলক।’
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, বারবার আসামিপক্ষ থেকে বলা হয়, মামলার এজাহারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এজাহারে যা-ই থাকুক, তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব হচ্ছে নিবিড়ভাবে তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার পর তাঁর পিএস মুহিতুল তখন লালবাগ থানায় একটি চার লাইনের জিডি করেছিলেন। ২১ বছর পর ওই চার লাইনের সূত্র ধরে তদন্ত কর্মকর্তা বিস্তৃত তদন্ত করেছেন। পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার তদন্ত হয়েছে। এই হত্যা মামলায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। সুতরাং তদন্তকারী কর্মকর্তার কাজই হচ্ছে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে আদালতকে প্রতিবেদন দেওয়া।
উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত জুনায়েদ আহ্মেদ পলক, সাবেক সংসদ সদস্য সাদেক খান ও সাবেক কাউন্সিলর সলিম উল্লাহর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।