
এ উপমহাদেশের প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতগুরু খ্যাত গিরীন চক্রবর্তী স্মরণে এই প্রথম একটি ‘স্মরণ অনুষ্ঠান’ অনুষ্ঠিত হল।
গতকাল শনিবার (১৭ মে) রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের ‘অংকুর’ ষ্টুডিওতে সঙ্গীতজ্ঞ গিরীন চক্রবর্তীর ১০৭ তম জন্মোৎসব উপলক্ষে প্রাণবন্ত ও সার্থক ওই স্মরণ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে স্থানীয় ‘সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র’ অংকুর শিশু কিশোর সংগঠন।
রাত ৮ টা থেকে প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে চলা ব্যতিক্রমী ওই স্মরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, অতিরিক্ত সচিব ও বিশিষ্ট কবি ড. শাহ মো. সানাউল হক।
অংকুর শিশু কিশোর সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সঙ্গীতশিল্পী আনিছুল হক রিপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভিসি প্রফেসর ড. সামসুদ্দিন আহমেদ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক ড. এস এম শাহনূর।
অনুষ্ঠানে গিরিন চক্রবর্তীর জীবন ও সঙ্গীত সাধনা নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেন ‘দ্য আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনের প্রাক্তন সাধারণ সস্পাদক, প্রবীণ নাগরিক কবি আবদুল মান্নান সরকার, ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিথি অধ্যাপক মানবর্দ্বন পাল, বিশিষ্ট উচ্চাঙ্গ ও নজরুল সঙ্গীত শিল্পী করিম হাসান খান, লেখক ও নজরুল গবেষক রফিক সোলায়মান, লেখক ও গবেষক অধ্যাপক মহিবুর রহিম, শিক্ষক ও লেখক কবি আবদুর রহিম, কবি ও গীতিকার প্রভাষক মোসলেম উদ্দিন সাগর, শিক্ষক ও কবি শারমিন সুলতানা, এটিএন নিউজের পূর্বাঞ্চলীয় ব্যুরো চিফ, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী পীযূষ কান্তি আচার্য, দৈনিক কালের কণ্ঠের আঞ্চলিক প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট তবলাশিল্পী গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, অংকুর উপদেষ্টা, লেখক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, এডভোকেট জাকারিয়া, আবুল খায়ের ও অংকুর সেক্রেটারী, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী জয়নাল আবেদীন।
এছাড়া, কবি ফারুক আহমেদ, কবি সাদমান শাহীদ, কবি শাহীন আল মামনু, কবি রুদ্র মুহম্মদ ইদ্রিস, কবি রোকেয়া রহমান, সঙ্গীত প্রশিক্ষক আশারুল ইসলাম, সঙ্গীতশিল্পী অরূপ রায় অপু, মিনারা আক্তার, মো. শাহজাহান, উপমা দেবনাথ, শম্ভু দাস, চুমকি সাহা, শম্পা সেন, সুব্রত সাহা, শ্যামল সাহা, অবিনাশ দেবনাথ, তবলা শিল্পী বাবুল মালাকার ও সুদীপ্ত সাহা মিঠু।
অনুষ্ঠান চলাকালে কলকাতা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আলোচনায় অংশ নেন প্রয়াত গিরীন চক্রবর্তীর একমাত্র কন্যা বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী চন্দা চ্যাটার্জী ও স্মরণ অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা গিরীন চক্রবর্তীকে দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করা ইটালি প্রবাসি বিশিষ্ট গীতিকার এম এ সালেহ।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতগুরু গিরীন চক্রবর্তী স্মরণে তাঁর ‘জীবন ও সঙ্গীত সাধনা’ নিয়ে এই প্রথম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ ধরণের ব্যতিক্রমী আয়োজন করায় বক্তারা অংকুরের ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তারা ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতি মানব প্রয়াত এই সঙ্গীতগুরুর কর্মযজ্ঞ ও স্মৃতিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে অবিলম্বে ‘গিরীন চক্রবর্তী স্মৃতি সংসদ’ প্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানান।
বক্তারা তাঁর জীবনের নানা দিক তুলে ধরে বলেন, এইচএমভি কোম্পানীতে সঙ্গীতের প্রশিক্ষক হিসাবে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে কবি শেখর কালিদাস রায়ের বিখ্যাত ‘নন্দপুর চন্দ্র বিনা বৃন্দাবন অন্ধকার’ কবিতাটিতে সুরারোপ করে তিনি খ্যাতির উচ্চ শিখরে পৌঁছান। দুই বাংলার অসংখ্য খ্যাতনামা সঙ্গীতশিল্পী তাঁর কাছে তালিম নিয়ে সুখ্যাতি অর্জন করেন। যাঁদের মধ্যে আব্বাসউদ্দীন আহমেদ, চিত্ত রায়, ভবানীচরণ দাস, চিন্ময় লাহিড়ী, আঙুরবালা দেবী, ইন্দুমতী দেবী, কমলা ঝরিয়া, শৈল দেবী, হরিমতি দেবী, রাধারাণী দেবী, যূথিকা রায়, বাঁশরী লাহিড়ী, শচীন দেববর্মণ, তালাত মাহমুদ, অসিতবরণ, সত্য চৌধুরী, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় উল্লেখযোগ্য নাম।
তবে আলোচকেরা বিগত ১০৭ বছরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গীত জগতের এই কিংবদন্তী সঙ্গীতগুরু গিরীন চক্রবর্তীকে নিয়ে কেবল ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই নয়, গোটা দেশেও সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে কোন স্মরণ অনুষ্ঠান না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সঙ্গীতশিল্পী জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে স্থানীয় শিল্পীরা গিরীন চক্রবর্তী রচিত ও সুরারোপিত বিভিন্ন গান গেয়ে শোনান।
প্রসঙ্গত, আল্লাহ মেঘ দে পানি দে, নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে, কিশোরগঞ্জে মাসির বাড়ি মামার বাড়ি চাতলপাড়, বাপের বাড়ি বাউনবাইরা নিজের বাড়ি নাই আমার এসব কালজয়ী বহুল প্রচারিত জনপ্রিয় গানগুলোর রচনা ও সুরকার ছিলেন গিরীন চক্রবর্তী। এছাড়া কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল কররে লোপাট, বল বীর চির উন্নত শির সহ নজরুলের ২৪ টি জনপ্রিয় গানে সুরারোপ করেছেন সঙ্গীতগুরু খ্যাত গিরীন চক্রবর্তী। এছাড়াও প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী তালাত মাহমুদের গাওয়া কালজয়ী ‘দুটি পাখি দুটি তীরে মাঝে নদী বহে ধীরে’ গানটিসহ একাধিক জনপ্রিয় গানের সুরস্রষ্টা এই গিরীন চক্রবর্তী।
১৯১৮ সালের ৫ মে সঙ্গীতজ্ঞ গিরীন চক্রবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের কালিকচ্ছে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৫ সালের ২২ ডিসেম্বর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।